Monday, July 30, 2012

বর্ষার সাতকাহন - বর্ষার প্রেম

বর্ষা মানে টাপুর টুপুরইলিশ মাছটি ভাজা 
বর্ষা মানে কালো মেঘে হারিয়ে যাওয়ার মজা 
বর্ষা মানে কাক-ভেজা দিন প্রথম কদম ফুলে  
বর্ষা মানে ফুল নেওয়া সেই কীটপতঙ্গ ভুলে 
বর্ষা মানে আকাশ ভেঙ্গে  বৃষ্টি যখন নামে 
বর্ষা মানে লং ড্রাইভে পথের শবনমে
বর্ষা মানে জলের কথা মেঘের বার্তা ঘোর
বর্ষা মানে চোখের মাঝে  অন্ধ করা ভোর   
বর্ষা মানে খিচুড়িও সঙ্গে ঠাকুর রবি
বর্ষা মানে প্রিয় বন্ধুর স্পর্শে তুমি কবি
বর্ষা মানে দু‍জনের সেই আপন গল্পগুলো
বৃষ্টি মিশে জীবনটাকে স্বপ্ন করে দিল

বর্ষার একই অঙ্গে কত রূপ! কখনো সুন্দর, কখনো ভয়ংকর। কখনো টুপটাপ আবার কখনো মুষলধারে। বর্ষার আবেদন চিরকালীন। একাধারে সৃষ্টি ও সংহারের প্রতীক। বর্ষা ঋতুর আগমন আমাদের সকলের মনেই অনাবিল আনন্দের সঞ্চার করে। কিন্তু কখনো কখনো আকাশে ছেয়ে আসা ঘন কালো মেঘ মনে গভীর বিষাদও জাগায়, করে তোলে উদাস, নস্টালজিক। মনে পড়ে ছোটবেলায় বৃষ্টির দিনের নানা টুকরো স্মৃতি - বাড়ির সামনে জমে থাকা জলে কাগজের নৌকা ভাসানো, খিচুড়ি খাওয়া, বৃষ্টিতে ভেজা, স্কুলে রেনি ডে, বন্ধুদের সঙ্গে মজা! এখনো আমার কাছে বর্ষা মানে খিচুড়ি, গান, গল্পের বই, সিনেমা আর প্রচুর আড্ডা। এবং অবশ্যই প্রেম! বর্ষার কোনো আলোচনাই বোধহয় শেষ হবে না প্রেমের কথা না বললে। বর্ষা এবং প্রেম অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ভরা বর্ষা, মেঘলা আকাশ, মেঘের ডাক, ঝমঝম বৃষ্টি, বিদ্যুতের ঝলক মনে একটা অদ্ভূত রোমান্টিকতার সৃষ্টি করে। প্রেমে পড়তে হলে, প্রেম কে ঠিক মত বুঝতে গেলে বর্ষাই আদর্শ। আমার কাছে বর্ষায় প্রেম মানে বৃষ্টিতে ভেজা, রিমঝিম বৃষ্টি, গরম চা বা কফিতে চুমুক আর জলে ভেজা ভালবাসার মানুষের দিকে অনেক ক্ষণ ধরে তাকিয়ে থাকা। বর্ষায় প্রেম মানে শরীরে শরীর ঠেকিয়ে হাঁটা - "এক অকেলি ছত্রি মে যব আধে আধে ভিগ রহে থে।" বর্ষাকে ভালো লাগে, ভালো লাগে কাঁচের জানলার সার্শিতে বৃষ্টির ছাঁট দেখতে এবং রবীন্দ্রনাথের গান শুনতে। ভালো লাগে প্রথম বৃষ্টির ফোঁটা, ঝোড়ো হাওয়া আর মাটির সোঁদা গন্ধ। খুব ইচ্ছে করে সমুদ্র সৈকতে বসে বৃষ্টি দেখতে, প্রাণ খুলে ভিজতে। আর ভালো লাগে লং ড্রাইভ। বর্ষায় সব কিছুই খুব রোমান্টিক লাগে। এমন একটা দিনেই বোধহয় তাকে বলা যায় "তোমায় ভালবাসি।" বর্ষায় বোধহয় ভালবাসার রূপ বদল হয়ে যায়। বাইরে পড়ে চলা অবিরাম বৃষ্টি এক অদ্ভূত বিষন্নতার সৃষ্টি করে - সেটা থেকে একমাত্র ভালোবাসাই পারে মুক্তি দিতে। বর্ষা আমার খুবই প্রিয়, কারণ আমি আদ্যন্ত রোমান্টিক মানুষ। বর্ষায় ভালো লাগে প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে, পছন্দের গান ও সিনেমা দেখতে। অসহ্য গরমের পরে যখন বর্ষা আসে তখন মন ভরে যায় আনন্দে, নিবিড় প্রেমে। দীর্ঘ বিরহ আর একাকিত্বের পর ভরা বর্ষা তাই প্রেমেরই বার্তাবাহক...   
                           


Friday, July 13, 2012

টিপ টিপ করে নয়, মুষলধারে পড়া বৃষ্টি...


কয়েকদিন আগে শুভর কাছে একটা বই পড়তে নিয়েছিলাম - সুচিত্রা ভট্টাচার্যের লেখা কাঁচের দেওয়াল। নির্দ্বিধায় বলতে পারি, বইটা সাম্প্রতিক কালে আমার পড়া অন্যতম সেরা বই। কি অসাধারণ সব মুহূর্ত...কি  প্রতীকী ব্যঞ্জনা! শেষ পাতায় এসে মনে হয় 'শেষ হয়েও হলনা শেষ।' আরো যেন জানার ছিল, বোঝার ছিল। পাওয়ার ছিল। চরিত্রায়ন কি সুন্দর, সাবলীল! সব চরিত্রই মনে গেঁথে যায় - বিশেষত শিঞ্জিনী, ওরফে বৃষ্টি। আমাদের সবার মধ্যেই কি একটা বৃষ্টি লুকিয়ে থাকে? প্রতিবাদী, অভিমানী, বোহেমিয়ান, অনুভূতিপ্রবণ এবং তার চেয়েও বেশি ছেলেমানুষ? যে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিতে চায় সামাজিকতার নানা বিধিনিষেধ...ভঙ্গুর বন্ধনকে? বৃষ্টির সঙ্গে আমি নিজের অনেক মিল খুঁজে পেয়েছি। যদিও বৃষ্টির মত আমি বিচ্ছিন্ন পরিবারে মানুষ হইনি বা নিজেকে ডুবিয়ে দিতে চাইনি নেশার অন্ধকারে। কিন্তু পড়তে পড়তে তাও মাঝেমাঝেই নিজেকে মনে হচ্ছিল বৃষ্টির মতই - অভিমানী, অনুভূতিপ্রবণ, নিঃসঙ্গ, অসহায়, ছেলেমানুষ - এবং একইসঙ্গে বৃষ্টির মত সুন্দর - কিন্তু টিপ টিপ করে নয়...মুষলধারে পড়া বৃষ্টি!!         

বইয়ের কিছু কিছু বর্ণনা অসামান্য। কিছু মুহূর্ত তুলনাহীন। যেমন, "সায়নের জন্য অপেক্ষা করে আছে বৃষ্টি...একজন দুঃখী মানুষই শুধু তার বন্ধু হতে পারে এখন। হৃদয়ের জমা কষ্ট হৃদয়েই রয়ে গেল...।" পাঠিকা হিসেবে সায়নের সঙ্গে বৃষ্টির দেখা হওয়া...মিলন কাঙ্ক্ষিত ছিল। যেমন কাঙ্ক্ষিত ছিল জয়ার সঙ্গে সুবীরের মানসিক টানাপোড়েনের অবসান। একইসঙ্গে নিচের কিছু কিছু বিবরণ মনে দাগ কেটে যায়:

"বৃষ্টি নিজেও বুঝতে পারল না কেন যে চোখে আচমকা জল এসে গেল তার। একেই কি তবে নিকটজনের টান বলে?" অথবা "..."কিছু কিছু মানুষকে চিনিয়ে দেওয়ার দরকার হয় না। দেখলেই চিনে ফেলা যায়...।" 

সায়নের প্রশ্নের সামনে অসহায় বৃষ্টি - "কি এত দুঃখ তোমার? বাবা মার ডিভোর্স হয়ে গেছে? স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে থাকতে পারেননি, আলাদা হয়ে গেছেন। সেটা সম্পূর্ণ তাদের পারসোনাল ব্যাপার। এই যে রনির মা বাবা সকাল-সন্ধে দুজনে দুজনকে অভিশাপ দ্যান, এটাই ঠিক? এক সঙ্গে থাকা কি দুজনে দুজনকে দুরমুশ করার জন্য?" বৃষ্টির কোনো উত্তর দেবার ছিল না...উত্তর কারোর থাকেও না!
        
"...কোনো মানুষই শুধু স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে থাকতে পারে না। নিজের মত করে আরেকবার জীবনটাকে গড়ে তুলতে চাওয়া অন্যায়? অন্যের মুখের দিকে তাকিয়ে সারা জীবন আপস করে চলতে হলে তার পরিণতি কি হয় জানো?..." ভীষণই সত্যি! স্মৃতি শুধু কষ্টই দেয়...তাই জীবনটাকে নিজের মত করে দেখা, বাঁচাটা খুবই দরকার। একটা মানুষ কতটা আপস করবে? তাই এক এক সময় লড়াই করতে করতে পিঠ ঠেকে যায় দেয়ালে। তখন মানুষ খুঁজে বেড়ায় এমন একটা অবলম্বন যেটা তাকে নতুনভাবে বাঁচতে, উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করে। ভুলে যেতে সাহায্য করে অসহ্য স্মৃতিগুলোকে। তাই রোজকার জীবনে বাঁচার একটা অনুপ্রেরণা একান্তই দরকার।

এরকম অজস্র সুন্দর বর্ণনা, মুহূর্ত, বইটা পড়তে পড়তে আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। কাঁচের দেওয়াল পড়তে পড়তে একবারও মনে হয়নি যে একটা বই পড়ছি। মনে হয়েছে এটা আমাদের রোজকার জীবনালেক্ষ।আমাদের জীবনে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা। বইটা শেষ হওয়ার পর তাই আশ মেটে না। মনে চলে অনুরণন। মনকে ভাবায় প্রতিনিয়ত, তোলপাড় করে...ঠিক বৃষ্টির মত...মুষলধারে পড়া বৃষ্টি!!          


   

Tuesday, July 3, 2012

বৃষ্টির জলের রং

মনটা খুবই খারাপ ঐন্দ্রিলার। ঝাপসা হয়ে আসা গাড়ির কাঁচের বাইরে তাকিয়ে রইলো একমনে। বুকের ভেতর একটা চাপা কষ্ট ঘুরপাক খাচ্ছে। "কি হয়েছে? কোনো কথা বলছনা যে আজ...আপসেট?" সহকর্মীদের সহসা প্রশ্নে চকিতে সম্বিত ফিরলো। কিছু বলতে পারল না ঐন্দ্রিলা। আপ্রাণ চেষ্টা করলো নিজেকে আটকাতে, জানলায় মুখটা ঘুরিয়ে নিতে...কিন্তু পারল না। ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল। সহকর্মীরাও অপ্রস্তুত... 

রিজু বলল "প্লিজ কেঁদো না...কি হয়েছে বলো? মেনল্যান্ড চায়নায় যাবে? আমার সঙ্গে টাকা আছে কিন্তু..."  

অরিজিতদাও অনেকক্ষণ ধরে জিজ্ঞাসা করলো ঐন্দ্রিলাকে। ঐন্দ্রিলা দেখেছে অরিজিতদা খুব বোঝার চেষ্টা করে, ফীল করে...কিন্তু না, কিছুই বলতে পারল না আজকে সে অরিজিতদাকে। কোনো উত্তর দিতে পারল না ঐন্দ্রিলা। চুপচাপ তাকিয়ে রইলো বাইরে।   

বাইরে টুপটাপ বৃষ্টি পড়ছে। গাড়ির কাঁচে বৃষ্টির অল্প ছাঁট। বৃষ্টি ঐন্দ্রিলার মনেও। বৃষ্টির জল প্রবেশ করেছে তার অন্তরে। বৃষ্টির জল আর চোখের জলের রং কি এক? এই সময় শহরটা খুব অদ্ভূত লাগে ঐন্দ্রিলার। আলো আর অন্ধকার মিলেমিশে একাকার। সব কিছু ঝাপসা, অস্পষ্ট। হয়ত ঐন্দ্রিলার চোখের জলে ধুয়ে গেছে সবকিছু...